সেট তত্ত্বের (Set Theory) এই ধারণাগুলো গণিতের অন্যান্য শাখার মতো লিনিয়ার অ্যালজেব্রা বোঝার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই গাইডে বাংলাতে সেটের ধারণাগুলো বিস্তারিতভাবে উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করছি, যাতে প্রতিটি সংজ্ঞা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়।
সেট তত্ত্ব (Set Theory) কি?
সেট (S): সেট হলো কিছু নির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র বস্তুর একটি সংগ্রহ। এই বস্তুগুলোকে বলা হয় সেটের উপাদান (elements)। যেমন, S={a,b,c} একটি সেট, যার উপাদানগুলো হলো a,b এবং c। একটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নাম, বা একটি ঝুড়ির ফলগুলো একটি সেট হতে পারে। বৈশিষ্ট্য:
- স্বতন্ত্রতা (Distinctness): একটি সেটের মধ্যে কোনো উপাদান একাধিকবার থাকতে পারে না। যেমন, {1,2,2} আসলে {1,2} এর সমান।
- ক্রমহীনতা (Unordered): সেটের উপাদানগুলোর ক্রম কোনো ব্যাপার না। {a,b,c} এবং {c,b,a} একই সেটকে বোঝায়।
- উপাদান লেখার পদ্ধতি: সাধারণত সেটের উপাদানগুলোকে কমা দিয়ে আলাদা করে দ্বিতীয় বন্ধনী ({}) এর মধ্যে লেখা হয়।
উদাহরন:
- বাংলাদেশের বিভাগগুলোর সেট: D={ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ}
- প্রথম ৫টি স্বাভাবিক সংখ্যার সেট: N={1,2,3,4,5}
উপাদানের সংখ্যা অনুসারে (Based on the number of elements)
এই ভাগটি সেটের মধ্যে কতগুলো উপাদান আছে তার উপর নির্ভর করে।
- ফাঁকা সেট (∅ বা {}): এটি হলো এমন একটি সেট যার কোনো উপাদান নেই। এটিকে একটি খালি ঝুড়ির মতো ভাবা যেতে পারে। প্রতিটি সেটই ফাঁকা সেটকে তার একটি উপসেট হিসেবে ধারণ করে। উদাহরণ:
- সপ্তাহের দিনের নাম যা ‘Z’ অক্ষর দিয়ে শুরু হয়। এমন কোনো দিন নেই, তাই এই সেটটি ফাঁকা সেট।
- 10 বছরের বেশি বয়সী মানুষের সেট যারা এখনও হাঁটতে শিখেনি। এটিও একটি ফাঁকা সেট।
- একক সেট (Singleton Set): এই সেটে শুধুমাত্র একটি উপাদান থাকে। উদাহরণ: B={5}। এই সেটে শুধুমাত্র একটি উপাদান 5 আছে।
- সসীম সেট (Finite Set): যে সেটের উপাদান সংখ্যা গণনা করা যায় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় গিয়ে শেষ হয়, তাকে সসীম সেট বলা হয়। উদাহরণ: পৃথিবীর সকল মহাদেশের সেট হলো একটি সসীম সেট, কারণ মহাদেশের সংখ্যা নির্দিষ্ট (৭টি)।
- অসীম সেট (Infinite Set): যে সেটের উপাদান সংখ্যা গণনা করে শেষ করা যায় না, তাকে অসীম সেট বলে। উদাহরণ: সকল বিজোড় সংখ্যার সেট, যেমন {1,3,5,…}।
সেটের মধ্যে সম্পর্ক অনুসারে (Based on relationships between sets)
এই ভাগটি দুটি বা তার বেশি সেটের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
- সমান সেট (Equal Sets): দুটি সেটকে তখনই সমান বলা হবে যখন তাদের উপাদানগুলো হুবহু এক হবে, উপাদানের ক্রম বা পুনরাবৃত্তি কোনো বিষয় নয়। উদাহরণ: A={a,b,c} এবং B={c,a,b}। এখানে A=B।
- সমতুল সেট (Equivalent Sets): দুটি সেটের উপাদান সংখ্যা সমান হলে তাদের সমতুল সেট বলা হয়। উদাহরণ: P={1,2} এবং Q={x,y}। এখানে n(P)=n(Q)=2, তাই P এবং Q সমতুল।
- উপসেট (A⊆ B): যখন একটি সেটের সব উপাদান অন্য একটি সেটের মধ্যেও থাকে, তখন প্রথম সেটটিকে দ্বিতীয় সেটের উপসেট বলা হয়। যেমন, B={1,2,3,4,5} এবং A={1,3}। যেহেতু A এর সব উপাদান (1 এবং 3) B তেও আছে, তাই A হলো B এর একটি উপসেট। উদাহরণ:
- A={1,2} এবং B={1,2,3}। এখানে A এর সব উপাদান B তে আছে, তাই A⊆ B।
- C={2,3} এবং B={1,2,3}। এখানেও C⊆ B।
- লক্ষ্য করুন, D={1,4} এবং B={1,2,3}। এখানে D এর উপাদান 4, B তে নেই, তাই D B এর উপসেট নয়।
- প্রকৃত উপসেট (Proper Subset): উপসেটের মতো, তবে এখানে দুটি সেট সমান হবে না। উদাহরণ: A={1,2} এবং B={1,2,3}। যেহেতু A এর সব উপাদান B-তে আছে, কিন্তু A=B, তাই A হলো B-এর একটি প্রকৃত উপসেট।
- সুপারসেট (Superset): উপসেটের বিপরীত ধারণা। যদি A একটি উপসেট হয় B-এর, তবে B হলো A-এর সুপারসেট। উদাহরণ: B={1,2,3} এবং A={1,2}। এখানে B হলো A-এর একটি সুপারসেট।
- বিচ্ছিন্ন সেট (Disjoint Sets): দুটি সেটের মধ্যে কোনো সাধারণ উপাদান না থাকলে তাদের বিচ্ছিন্ন সেট বলা হয়। উদাহরণ: A={1,2,3} এবং B={4,5,6}। A∩B=∅ (ফাঁকা সেট), তাই এরা বিচ্ছিন্ন।
- সংযোগ (A∪B): দুটি সেটের সংযোগ হলো একটি নতুন সেট, যেখানে উভয় সেটের সব উপাদান একসাথে থাকে। যে উপাদানগুলো দুটি সেটেই আছে, সেগুলো একবারই লেখা হয়। যেমন, যদি A={1,2,3} এবং B={3,4,5} হয়, তাহলে তাদের সংযোগ হবে A∪B={1,2,3,4,5}। উদাহরণ:
- যদি A={1,2,3} ও B={3,4,5}হয়, তাহলে A∪B={1,2,3,4,5} হবে|
- আবার, যদি C={কমলা, আপেল} ও D={কলা, আপেল} হয়, তাহলে C∪D={কমলা, আপেল, কলা} হবে|
- ছেদ (A∩B): দুটি সেটের ছেদ হলো একটি নতুন সেট, যেখানে শুধুমাত্র সেই উপাদানগুলো থাকে যা উভয় সেটেই সাধারণ বা কমন। আগের উদাহরণটি দিয়ে বললে, A={1,2,3} এবং B={3,4,5} এর ছেদ হবে A∩B={3}, কারণ 3 হলো একমাত্র উপাদান যা দুটি সেটেই আছে। উদাহরণ:
- যদি A={1,2,3} ও B={3,4,5}হয়, তাহলে A∩B={3} হবে|
- আবার, যদি C={কমলা, আপেল} ও D={কলা, আপেল} হয়, তাহলে C∩D={আপেল} হবে|
সেটের গঠন বা প্রকৃতি অনুসারে (Based on structure or nature)
- সার্বিক সেট (U): এটি হলো এমন একটি সেট যা একটি নির্দিষ্ট আলোচনার জন্য বিবেচনাধীন সব সম্ভাব্য উপাদানকে ধারণ করে। এটি হলো সবচেয়ে বড় সেট, যার মধ্যে অন্য সব সেট বিদ্যমান। যেমন, যদি আপনি 1 থেকে 10 পর্যন্ত সংখ্যা নিয়ে কাজ করেন, তাহলে সার্বিক সেট হবে U={1,2,3,4,5,6,7,8,9,10}। উদাহরণ:
- যদি আপনি জোড় ও বিজোড় সংখ্যা নিয়ে কাজ করেন, তাহলে সার্বিক সেট হতে পারে সব পূর্ণসংখ্যার সেট ( Z)।
- যদি আপনি বাংলাদেশের বিভাগগুলো নিয়ে কথা বলেন, তাহলে সার্বিক সেট হতে পারে বাংলাদেশের সব জেলার সেট।
- পাওয়ার সেট (Power Set): একটি সেটের সব উপসেট নিয়ে গঠিত সেটকে পাওয়ার সেট বলে। উদাহরণ: A={a,b}। A-এর উপসেটগুলো হলো ∅, {a}, {b}, {a,b}। সুতরাং, P(A)={∅,{a},{b},{a,b}}।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেট (Other important sets)
- সংগ্রহের সেট (Set of Sets): একটি সেট যার উপাদানগুলোও আবার সেট, তাকে সংগ্রহের সেট বলে। উদাহরণ: একটি পরিবারের সদস্যদের সেট হলো {বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে}। কিন্তু একটি সংগ্রহ সেট হতে পারে: {{বাবা, মা},{ছেলে, মেয়ে}}, যেখানে উপাদানগুলো সম্পর্কের ভিত্তিতে আলাদা সেট।
- পূরক সেট (Complement of a Set): কোনো একটি সেট A-এর পূরক সেট হলো সেই সব উপাদান নিয়ে গঠিত সেট যা সার্বিক সেট U-এর মধ্যে আছে কিন্তু A-এর মধ্যে নেই। উদাহরণ: যদি U={1,2,3,4,5} এবং A={1,3} হয়, তাহলে Ac={2,4,5}।
এই ধারণাগুলো ভালোভাবে বুঝলে আপনি লিনিয়ার অ্যালজেব্রার অনেক জটিল ধারণার ভিত্তি তৈরি করতে পারবেন, যেমন ভেক্টর স্পেস (Vector Space), যেখানে উপাদানগুলোকে সেটের মতো করে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের মধ্যে কিছু নিয়ম মেনে অপারেশন করা হয়।
Leave a Comment